বিশেষ প্রতিনিধি :
গত কয়েকদিনের টানা ভারী বৃষ্টি ও সাগরের জোয়ারের পানিতে ফেনীর সোনাগাজী ও দাগনভূঞায় উপজেলার ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পুকুর, মাছের ঘের, বীজতলা, গ্রামীণ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। প্লাবিত গ্রামগুলোর লোকজন পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সোমবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করে ত্রাণ কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।
সরেজমিনে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, সোনাগাজী উপজেলার চর চান্দিয়া, চর দরবেশ ও সোনাগাজী সদর ইউনিয়নে গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলার উপকুলীয় দশটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কয়েকটি গ্রামে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। এদিকে দাগনভূঁঞা উপজেলার সিন্দুরপুর ইউনিয়নের তিনটি গ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এ গ্রামগুলিতে শতাধিক পরিবার সম্পূর্ন পানিবন্দী হয়ে রয়েছে।
গত কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণ ও নদীতে জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়াসহ উজানের পানির কারণে সোনাগাজী উপজেলার উপকূলীয় বাসিন্দারা বিপাকে পড়েছেন। দিন-রাত জোয়ারের পানির চাপ বাড়লেই বাড়ি ঘরে ঢুকে যায়। এতে উপকূলীয় মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
এদিকে জোয়ারের পানি ও বৃষ্টির পানিতে চর চান্দিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ পূর্ব চর চান্দিয়া, পূর্ব চর চান্দিয়া, দক্ষিণ চর চান্দিয়া, পূর্ব বড়ধলী, সদর ইউনিয়নের চর খোন্দকার, সুজাপুর, চর খোয়াজ, চর দরবেশ ইউনিয়নের পশ্চিম চর দরবেশ, দক্ষিণ চর দরবেশ, দক্ষিণ পশ্চিম চর দরবেশ গ্রামগুলোতে পানি ঢুকে ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তলিয়ে গেছে প্রায় ২৫ হেক্টর আমনের বীজ তলা। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। এছাড়া কয়েকটি গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। প্লাবিত গ্রামের অধিকাংশ গ্রামীণ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে।
দক্ষিণ পূর্ব চর চান্দিয়া গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্ণ চন্দ্র দাস জানান, বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি ঢুকে তার বাড়ি-ঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ভেসে গেছে তার পুকুরের মাছ।
একই গ্রামের নুর নবী বলেন, জোয়ারের পানি তার ঘরে ঢুকে বিছানা ও খাট ভিজে গেছে। পাতিলে থাকা ভাত নষ্ট হয়ে গেছে। রাতে পরিবারের লোকজন শুকনো খাবার খেয়ে ঘুমাতে হবে।
চর খোন্দকার জেলে পাড়ার বাসিন্দা প্রিয়লাল জলদাস জানান, বৃষ্টি ও জোয়ারের পানির চাপে জেলে পাড়া থেকে সোনাগাজী যাওয়ার সড়কটি জেলে পাড়া অংশে অনেকাটাই ভেঙ্গে গেছে। তিনি বলেন, রাতে আবার জোয়ার আসলে সড়কের বাকি অংশও ভেঙ্গে যেতে পারে।
দক্ষিণ চরচান্দিয়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মো. ইব্রাহীম জানান, সোনাগাজীর দক্ষিণাঞ্চলে বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধ না থাকায় প্রতিনিয়ত তারা জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। গতকাল সোমবার দুপুরে জোয়ারের পানিতে তার তিনটি মৎস্য প্রকল্পের মাছ ভেসে গেছে।
চর দরবেশ ইউনিয়নের বাসিন্দা সমর দাস জানান, বৃষ্টির পানিতে তার ২৪ শতক জমির আমনের বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।
চর চান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বলেন, সোনাগাজীর দক্ষিণে চর চান্দিয়া ইউনিয়নসহ দুটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করেন। সম্প্রতি নদী ভাঙ্গনে বেড়ি বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় জোয়ারের পানিতে উপকুলের মানুষগুলো কষ্ট করছে। তিনি উপকুলের জনসাধারণকে বন্যা ও জোয়ারের পানি থেকে রক্ষার জন্য বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মানের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবী জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মিনহাজুর রহমান বলেন, জোয়ার ও বৃষ্টির পানির চাপে ভেঙ্গে যাওয়া সড়ক দ্রুত সংস্কার করা হবে। তিনি বলেন, জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে জানমালের যাতে কোন প্রকার ক্ষতি না হয় সে দিকে আমরা লক্ষ্য রেখেছি।
এদিকে দাগনভূঞা উপজেলার সিন্দুরপুর ইউনিয়নের শরীফপুর, সেকান্তরপুর, উত্তর কৈখালী, দক্ষিন কৈখালী ও গৌতমখালী পাঁচটি গ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এ গ্রামগুলোর অধিকাংশ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। স্বাভাবিক যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটা বন্ধ হয়ে পড়ছে। পুকুর, মাছের ঘের, বীজতলা, গ্রামীণ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। শতাধিক পরিবার সম্পূর্ন পানিবন্দী হয়ে রয়েছে।
সিন্দুরপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মো. ফোরকান উদ্দিন বলেন, তার ওয়ার্ডের অধিকাংশ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গুচ্ছ গ্রামের ১০ পরিবার স্থানীয় বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। অন্যান্যরা নিজ বাড়িতে থাকলেও নানা দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
ইউপি চেয়ারম্যান মো. নুর নবী বলেন, বন্যা দুর্গত এলাকায় উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা পরিদর্শন করে ত্রাণ কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন এবং পানিবন্দি মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে আমরা কাজ করছি।
দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ভূঁঞা জানান, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ী ঢলের পানিতে উপজেলার সিন্দুরপুর ইউনিয়নের শরীফপুর, সেকান্তরপুর, উত্তর কৈখালী, দক্ষিন কৈখালী ও গৌতমখালী গ্রামে বন্যা পরিস্থির সৃষ্টি হয়েছে। এতে বীজতলাসহ গ্রামীন সড়ক সমুহ পানিতে তলিয়ে গেছে। পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। গুচ্ছ গ্রামের ২৪ পরিবার, জেলে পল্লীর ৫২ পরিবারসহ শতাধিক পরিবার সম্পূর্ন পানিবন্দী হয়ে রয়েছে। গত রোববার বিকেলে তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে বন্যা কবলিত গ্রামগুলির অবস্থা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- » বাংলাদেশ সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ ফেনী জেলা আহবায়ক কমিটি গঠিত
- » ফেনী বন্ধুসভার বৃক্ষরোপণ ও বিতরণ
- » আমার দেশ সম্পাদকের রত্নগর্ভা মাতা অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগমের মাগফিরাত কামনায় ফেনীতে দোয়া
- » গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে ফেনীতে সাংবাদিকদের মানববন্ধন
- » ফেনীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাংবাদিকদের উপর হামলার গোপন পরিকল্পনা ফাঁস
- » জনতার অধিকার পার্টির চেয়ারম্যানের উপর হামলা, সংবাদ সম্মেলন
- » ফেনী পৌর বিএনপির সদস্য নবায়ন কর্মসূচি উদ্বোধন
- » ফেনীতে হেফাজতের দোয়া মাহফিলে আজিজুল হক ইসলামাবাদী- ‘আলেম সমাজ ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ সৃষ্টি হবে না’
- » ফেনীতে হাফেজ তৈয়ব রহ. স্মরণে দোয়ার মাহফিল
- » ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ফেনীতে বিএনপি’র বর্ণাঢ্য বিজয় মিছিল, সমাবেশ “গণহত্যার দ্রুত বিচার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি”